হাওজা নিউজ এজেন্সি: বন্ধুসুলভ, আন্তরিক ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া এই সাক্ষাৎ মানুষকে আশা ও প্রেরণা যোগায়, মনোবল দৃঢ় করে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ও হতাশাজনক ফিসফাস থেকে রক্ষা করে। বিপরীতে, যদি মুমিনরা এসব সাক্ষাৎকে অবহেলা করে তবে সত্য ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায়, ভুলে যাওয়া শুরু হয় এবং কর্মের অনুপ্রেরণাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
মরহুম আয়াতুল্লাহ মিজবাহ ইয়াযদি (রহ.) এক নৈতিক শিক্ষা ক্লাসে “বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ ও মেলামেশা” প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যা আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আহলে বাইতের (আ.)-এর রেওয়ায়াতে এসেছে—
تَزَاوَرُوا وَ تَلَاقَوْا وَ تَذَاکَرُوا أَمْرَنَا وَ أَحْیُوهُ
“তোমরা এক অপরের সাথে সাক্ষাৎ করো, একত্রিত হও, আমাদের বিষয় (অর্থাৎ আমাদের বেলায়েত) আলোচনা করো এবং তা জীবিত রাখো।”
[আল–কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৫]
এই নির্দেশ কোনো বিশাল জনসমাবেশের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং যদি মাত্র দুজন মুমিনও আল্লাহর পথে একত্রিত হয়, তবুও তাদের সাক্ষাৎ সুফল বয়ে আনে, তাদের অন্তরকে শক্তিশালী করে এবং তাদের তাওফিক বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: একে অপরকে দেখতে যাও, সাক্ষাতের সুযোগ হাতছাড়া কোরো না, আর আহলে বাইতের (আ.) আদর্শ ও নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে পরস্পরের সাথে আলাপ করো। কেননা এভাবেই সেই আদর্শ ও সত্যগুলো জীবিত থাকে এবং ইসলামী সমাজে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয়।
অতএব, পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও খোঁজখবর নেওয়া (تزاور) আসলে আহলে বাইত (আ.)–এর আদর্শকে জীবিত রাখার একটি কার্যকর মাধ্যম, যা ইসলামের প্রকৃত সত্যকে জাগ্রত রাখে এবং মুমিনদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধকে আরও দৃঢ় করে।
কিন্তু যদি এই সাক্ষাৎ–সাক্ষাতগুলো পবিত্র, বন্ধুত্বপূর্ণ, লক্ষ্যভিত্তিক ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না হয়, তবে ধীরে ধীরে সত্যগুলো ম্লান হয়ে যাবে, মানুষ তা ভুলে যাবে এবং সেগুলো বাস্তবে পালনের অনুপ্রেরণাও দুর্বল হয়ে পড়বে।
ফলশ্রুতিতে, মানুষের আশা কমে যাবে, শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং হতাশাজনক কুমন্ত্রণা দেবে—“সব শেষ, আর কোনো লাভ নেই, বৃথা চেষ্টা কোরো না…”—এভাবে মানুষকে নিরাশ করে ফেলবে এবং সমাজে আধ্যাত্মিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে।
[মরহুম আয়াতুল্লাহ মিজবাহ ইয়াযদি (রহ.)–এর ১৮ ডিসেম্ভর ২০১৫ সাল তারিখে প্রদত্ত নৈতিক শিক্ষা ক্লাস থেকে নেওয়া।]
উপদেশ: বন্ধুদের সাথে ঈমানি সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতা ইসলামী সমাজে শুধু বন্ধুত্ব রক্ষার মাধ্যম নয়, বরং তা সত্যকে জীবিত রাখা, মনোবল বৃদ্ধি এবং শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচার এক শক্তিশালী উপায়। অতএব, প্রত্যেক মুমিনের উচিত এই সাক্ষাৎকারগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একত্র হওয়া এবং আহলে বাইতের (আ.) আদর্শকে নিজেদের জীবনে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা।
আপনার কমেন্ট